গত কয়েকবছর ধরে দেশীয় ওয়েব হোষ্টিং জগতের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ের নামে BDIX Hosting যার প্রতিনিয়ত আলোচনা, সমালোচনা চলছে বিভিন্ন কমিনিউটিতে। আজ আপনাদের জন্য বাংলায় এই বিষয়ে সুন্দরভাবে ধারণা দেব যাতে খুব সহজে আপনি বিডিআইএক্স সম্পর্কে পূর্নাঙ্গ ধারণা পেতে পারেন। আশা করছি পুরো আর্টিকেলটি অত্যন্ত মনোযোগের সাথে পড়ে শেষ করবেন। অগ্রীম ধন্যবাদ! চলুন জেনে নেয়া যাক BDIX Hosting কি ।
Table of Contents
Toggleএটি একটি ওয়েব হোষ্টিং যা বাংলাদেশ ভিত্তিক ইউজারদের ওয়েবসাইটের স্পিড ফাস্ট করার জন্য প্রায় ৩৫০০ এর মতো Internet Service Provider (ISP) মিলে BDIX প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং এই লিষ্টে প্রতিনিয়তই নতুন নতুন প্রোভাইডার (ISP) যোগ দিচ্ছে। সংক্ষেপে যদি বলি BDIX এর পূর্ণরুপ হলো: Bangladesh Internet Exchange. এবং BDIX এক ধরনের ভার্চুয়াল নেটওয়ার্ক তৈরি করে যার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই তাদের সার্ভার থেকে যে কোন ফাইল অনেক কম সময় অনেক দ্রুত গতিতে ডাউনলোড করতে পারবেন। এই নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত সার্ভারকেই BDIX Hosting বলা হয়।
এবার আসুন আমরা জেনে নিই আমরা কেন BDIX Hosting ব্যবহার করবো? ধরুন আপনার ওয়েবসাইটটিরর টার্গেটেড অডিয়েন্স বাংলাদেশী; যেমন – বিভিন্ন ধরণের লোকাল নিউজপেপার, দেশীয় ব্রান্ডের কোম্পানী, সংস্থা, অনলাইন সেলিং শপ ওয়েবসাইট ইত্যাদি যাদের ৯০% ভিজিটর আসে বাংলাদেশ থেকে তাহলে অন্যান্য সাধারণ হোষ্টিং না নিয়ে বিডিআইএক্স ব্যবহার করা উচিত। কারণ সাধারণ হোষ্টিং এর তুলনায় BDIX Hosting ২০০ গুণ পর্যন্ত গতি দেয় যা আপনার ওয়েবসাইটকে করে তুলবে সুপার ফাস্ট! এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, একটি ওয়েবসাইট যদি লোড নিতে ৩ সেকেন্ডের বেশি সময় নেয় তাহলে ৫৫% ভিজিটর অন্য সাইটে মুভ করে কারণ স্লো রানিং ওয়েবসাইট ভিজিট করা বর্তমান জেনেরেশান বিরক্তির চোখে দেখে। তাই BDIX Hosting ব্যবহার করে আপনার ওয়েবসাইটকে Super Fast করে তুলতে পারলে ভিজিটর হারানোর ভয় থাকবেনা। বাংলাদেশ থেকে BDIX Hosting এ 1ms থেকে 6ms পর্যন্ত Ping পাওয়া যাবে সেখানে USA Server এ বাংলাদেশ থেকে পাওয়া যায় 300ms থেকে 400ms পর্যন্ত। তাই অনুমান করাই যায় বিডিআইএক্স কতটা ফাস্ট হবে!
ধরুন, আপনার ওয়েবসাইটটি বাংলাদেশ থেকে পরিচালিত হচ্ছে কিন্তু এর টার্গেটেড অডিয়েন্স দেশের বাইরের তথা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলের যাকে টেকনিক্যাল ভাষায় বলা হয় গ্লোবাল অডিয়েন্স, তাহলে অবশ্যই BDIX Hosting ব্যবহার করা উচিত না। চিন্তায় পড়ে গেলেন? আচ্ছা, এ সম্পর্কে আমরা BDIX Hosting এর অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করছি। আশা করছি আপনি বুঝতে পারবেন।
একটু খেয়াল করলেই দেখবেন দেশের বিভিন্ন হোষ্টিং প্রোভাইডাররা বিভিন্ন মূল্যে হোষ্টিং প্যাকেজ বিক্রি করছে। কেউ ৫জিবি BDIX Hosting দিচ্ছে ২০০ টাকায় আবার কেউ দিচ্ছে ১৭০০/১৮০০ টাকায়! ভাবতেই অবাক হবেন, ভাবছেন এর কারণ কি? BDIX Hosting এর দাম অন্যান্য সাধারণ হোষ্টিং এর চেয়ে কিছুটা কম বলে এতো কম না যে ৫জিবি হোষ্টিং ২০০ বা তার কমে সেল করা সম্ভব। আসুন এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই!
ক্র্যাক লাইসেন্স
Hosting Provider দের বিভিন্ন ধরণের লাইসেন্স কিনতে হয়; যেমন- WHMCS License, WHM/cPanel License, Cloud Linux, Litespeed এছাড়া Security Software ও Module এর লাইসেন্স। এতে করে বিজনেস খরচ কমে আসে অনেকগুণ। এছাড়া যেই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তারা বিজনেসটি করে তার থিমটাও দেখা যায় নাল থিম নয়তো ফ্রি থিম যাতে থাকতে পারে ক্ষতিকর ম্যালওয়্যার ভাইরাস যা ইউজারদের হোষ্ট করা ওয়েবসাইটও নিরাপত্তার ইস্যুতে পড়তে পারে।
সীমিত কাষ্টমার সাপোর্ট
যারা কমদামে হোষ্টিং প্রোভাইড করে তারা বেশিরভাগ একাই সবকিছু হ্যান্ডেল করে থাকে যেমন- সার্ভার ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং, কাষ্টমার সাপোর্ট দিয়ে থাকে তাই তাদের পক্ষে ২৪/৭ সাপোর্ট দেয়া সম্ভব না অথচ ২৪ ঘন্টা সাপোর্ট দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ ইউজারদের ওয়েবসাইট নিয়ে কখন ঝামেলায় পড়বে তা বলে কয়ে আসবে না। আর ২৪ ঘন্টা কাষ্টমার সেবা দিতে অন্তত ৪/৫ জন এক্টিভ ইমপ্লোয়ি দরকার যা বেশ ব্যয়বহুল। সেই খরচটা বেচে যাওয়ায় তারা কমদামে হোষ্টিং দিতে পারে। এবার সিদ্ধান্ত আপনার, কমদামে হোষ্টিং নিয়ে পর্যাপ্ত সাপোর্ট এর অভাবে সাইট ডাউন করে রাখবেন?
ওভারসেলিং
অনেকে হোষ্টিং প্রোভাইডাররা তাদের সার্ভার খরচ তুলে প্রফিট ঠিক রাখতে ওভারসেলিং করে থাকে। একটি ওয়েবসাইট স্লো হবার অন্যতম প্রধান কারণ এই ওভার সেলিং সার্ভার। অন্যদিকে দেখা যায় ভাল ভাল প্রোভাইডাররা তাদের রিসোর্স অনুযায়ী হোষ্টিং সেল করে কিন্তু কমদামী হোষ্টিং প্রোভাইডাররা সেই একই রিসোর্সে ১০০-১৫০ ভাগে ভাগ করে হোষ্টিং সেল করে।
লো কনফিগারেশন সার্ভার
একটি হাই কনফিগারেশন-এর সার্ভার মেইনটেইন করতে অনেক খরচ লাগে। কিন্তু অনেকেই সেই খরচ বাঁচিয়ে অধিক মুনাফার লোভে লো কনফিগারেশনের সার্ভার চালায়। কিন্তু এধরণের সার্ভারে ওয়েবসাইটের আপ-টাইম, লোডিং স্পিড থাকে কম যা ওয়েবসাইটের বিজনেসের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।
একটি ওয়েবসাইট মানে একটি স্বপ্ন। যারা প্রফেশনালভাবে ওয়েবসাইট বানিয়ে নেয় নিজেদের ব্যবসার জন্য তাদের অনেক আশা-প্রত্যাশা থাকে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আয় করবে। কিন্তু সেই ওয়েবসাইট যদি চালাতে সমস্যার সম্মুখীন হন তাতে করে কিন্তু স্বপ্ন পূরণের বাঁধা সৃষ্টি হয়। ধরুন, আপনি অল্পকিছু হোষ্টিং খরচ বাঁচাতে কমদামী হোষ্টিং নিয়ে আপনার স্বপ্নের ওয়েবসাইট হোষ্ট করলেন, দেখা গেল হোষ্টিং এঁর চেয়ে ৫০গুণ ভ্যালুর কাষ্টমার হারাচ্ছেন প্রতিবছর শুধুমাত্র কমদামি হোষ্টিং ব্যবহার করার জন্য।
আসুন আমরা এই সম্পর্কে আরও বিস্তারিতভাবে জেনে নিই!
স্লো স্পিড সাইট
কমদামে যারা হোষ্টিং প্রোভাইড করে তাদের মধ্যে শতভাগ প্রোভাইডাররাই অধিক মুফার আশায় রিসোর্সের চেয়ে বেশি জনের কাছে হোষ্টিং সেল করে থাকে অথবা লো কনফিগারেশন সার্ভার মেইনটেইন করে থাকে এতে করে স্বাভাবিকভাবেই সার্ভারে প্রভাব পড়ে তাতে করে ওয়েবসাইট স্লো হয়ে যায়। অথচ পরিসংখ্যান বলে কোন ওয়েবসাইট প্রথমবার লোড নিতে যদি ৩ সেকেন্ডের বেশি সময় নেয় তাহলে ৫৫% ভিজিটর অন্য সাইটে চলে যায়।
সীমিত ফিচার / ফাংশন
কমদামে হোষ্টিং প্রোভাইডাররা যে পরিমাণে ফিচার ও ফাংশন থাকে তা স্বনামধন্য প্রোভাইডারদের চেয়ে খুবই নগণ্য। অথচ প্রয়োজনীয় ফিচারগুলো সাইট পরিচালনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। যদিও কিছু কিছু অপশন / ফাংশন থাকে সেগুলো ব্যবহার করাও ক্রিটিক্যাল মানে কাজ করতে হলে তখন কোন প্রফেশনাল সার্ভার এক্সপার্টদের হায়ার করতে হয় যা একজন ওয়েবসাইটের মালিকের জন্য ব্যয়বহুল।
সাপোর্ট সমস্যা
ওয়েবসাইট পরিচালনার সময় অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তৎক্ষণাৎ আপনাদের হোষ্টিং প্রোভাইডারদের সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আপনি যদি তাদের সময়মতো না পান তখন পড়তে হয় বিপাকে। অথচ কমদামি BDIX Hosting প্রোভাইডারগণ পর্যাপ্ত সাপোর্ট পারসন না রেখে বেশি মুনাফা অর্জন করে কিন্ত তার খেসারৎ দিতে হয় আপনাদের মতো ভুক্তভুগিদের। ভেবে দেখুন ২৪/৭ সাপোর্ট ব্যবস্থা কতটা গুরুত্বপূর্ণ!
সাইট হ্যাক হবার সম্ভাবনা
কমদামে হোষ্টিং প্রোভাইডাররা নিজেদের সাইটে লাইসেন্স বিহীন নাল থিম ব্যবহার করে হোষ্টিং সেল করে। তাই সিকিউরিটি নিয়ে সংশয় থাকে, যেকোন সময় আপনার ওয়েবসাইট হ্যাক হয়ে যেতে পারে।
নো এসইও রেজাল্ট
স্লো স্পিডের ওয়েবসাইট এসইও’র জন্য ভাল কাজে আসেনা। যত ভাল মানের এসইও এক্সপার্ট হায়ার করে আপনার স্বপ্নের ওয়েবসাইটটি অপ্টিমাইজড করা চেষ্টা করেন না কেন, কোন কাজে আসবেনা। তাই আপনার সাইটের স্পিড বাড়াতে অবশ্যই কমদামের BDIX Hosting ব্যবহার করা উচিত না।
ধরুন আপনি নিজে শখে করে একটি ওয়েবসাইট ডেভেলপ করেছেন সেটা লাইভ করতে চাচ্ছেন যেন বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-সজনেরা দেখতে পারা তখন আপনি চাইলে নিতে পারেন। কারণ আপনি এই সাইট দিয়ে ব্যবসা করবেন না। তাই এই সাইট আপনার জন্য খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণও না। ভিজিটরও হবেনা বেশি। তাহলে কমদামের BDIX Hosting নিতে পারেন।
আপনার কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে আপনার স্বপ্নের ওয়েবসাইটটি হোষ্ট করার জন্য ভাল প্রোভাইডার খুঁজছেন? তাহলে কেনার আগে ভাবুন কোন কোম্পানি থেকে হোষ্টিং নিবেন? নিম্নে কিছু পয়েন্ট তুলে ধরা হল, আশা করছি আপনি সমাধান পাবেন।
Copyright © 2024 HostSeba. All Rights Reserved.